নতুন গল্প – “রোমান্টিক”
.
.
.
তিন চারববার ডাকার পরেও যখন মিলি কোন জবাব দিলনা তখন আমি ওর গায়ে হাত দিয়ে আবার ডাকলাম,
-মিলি,
.
মিলি কিছু বলল না,শুধু হাত টা সরিয়ে দিল।
ও অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে আছে তাই ওর মুখ টাও দেখা যাচ্ছেনা।
-এপাশে তাকাও না প্লিজ?
এবারেও কোন রিস্পন্স পেলাম না তাই বাধ্য হয়েই বললাম,
-এই গোলাপী বেগম, এদিকে তাকাও,,
.
মিলি মুখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে এমন একটা লুক দিলে যেন আমাকে কাঁচাই খেয়ে ফেলবে।আমি ওকে দেখে হাসলাম।গোলাপী নাম টা কাজ করেছে। এই নামে ও এত ক্ষেপে যায় জানতাম না তো।
-আরেক বার যদি এ নামে ডাক দিছো তো তোমাক মেরেই ফেলব,,
-আচ্ছা সরি,,আর ডাকব না।কিন্তু তুমি আমার সাথে কথা বলছ না কেন?
-বলছি তো তুমি এখন ব্লক প্রাপ্ত?
-মানে?
-মানে আবার কি? কারো সাথে কথা না বলতে চাইলে ফেসবুকে যেমন তাকে ব্লক দেই।ঠিক তেমন এটা,,
.
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,
-এটা ফেসবুক পাইছো নাকি?
-না কিন্তু তবুও ব্লক,,
.
জুকারবারগ এর উপর মারাত্ত্বক রাগ উঠলো, হাতের কাছে তারে পেলে কি করতাম কে জানে? কি ব্লক অপশন চালু করছে।
.
আমি আবার বললাম,
-আমি কিন্তু একশ বার সরি বলছি,
-উহু, ব্লক একদিনের আগে খুলবেনা,,
-আর কোন উপায় নাই?
-আছে?
-কি?
-গান গেয়ে শুনাও,,
-কিহ,,অসম্ভব আমি পারিনা গান,,
-তাহলে যেমন আছে তেমনই থাকবে,,
-প্লিজ মিলি,,
.
মিলি মুখ ঘুরিয়ে আবার আমার দিকে তাকাল।তারপর বলল,
-তুমি এত আনরোমান্টিক কেন? কত রোমান্টিক ভাবছিলাম তোমাকে?
-গান গাইলে কেউ রোমান্টিক হয় নাকি?
-তাহলে,,
-আসো কাছে আসো,, রোমান্টিকতা দেখাই,
-অসভ্যর মত কথা বলবা না,,
-আচ্ছা,,
.
এত সামান্য ব্যাপারে মিলি এত রাগ হয় কেন বুঝিনা?
ব্যাপার টা সামান্যও বলা যায় না তার নিচে কিছু থাকলে সেটা।আজ অফিসে একটু বেশি কাজ ছিল।বিকেলে একবার মিলি ফোন দিয়েছিল, কাজের চাপে ফোন না ধরে কেঁটে দিয়েছলাম।
এই এটুকু ব্যাপার এ মিলি এত টা ক্ষেপে যাবে ভাবিনি।
.
বাড়িতে আসার পরেও সব ঠিক ছিল,যদিও মিলি আমার সাথে কোন কথা বলেনি।খাওয়া দাওয়া শেষে যখন বিছানায় শুতে এসেছি তখনি ব্যাপার টা বুঝলাম।বিছানায় এসে বসতেই বলল,
-এখন আর আমাকে ভাল্লাগেনা তাই না?
-মানে?
-মানে আবার কি? কথা বলতে চাওনা তাই ফোন কেঁটে দাও,
-আরে একটু ব্যাস্ত ছিলাম।
-এখন তো বলবাই,
-সত্যি বলতেছি,,
-আর কথা বলবানা।পুরা একদিন কোন কথা বলবানা আমার সাথে,,
.
আমি ওকে দেখে অবাক হই। এই চিকন বাচ্চা করে মেয়েটার মাঝে এত রাগ কই থেকে আসে কে জানে?
.
আমি আবার ডাকলাম,
-মিলি,,
-কি?
-চা খাবে?
-বানাইতে পারবোনা এ ঠান্ডায় উঠে,
-আমি বানিয়ে আনছি,
-পারবা,,
-হুম,,
-হাত পুরাবা নাতো আবার?
-আরেহ নাহ,, কি যে মনে করো।বিয়ের আগে কত্ত বানাইছি,,
-হুম, যাও,
.
এক সময় চা ভালই বানাতাম,, সেটা এক সময়। অনেক দিন চা বানাই না,এখন যে বানাতে পারবোনা তা না।তবে স্বাদ কেমন হবে সেটা নিয়ে প্রবলেম।
.
চায়ে একটু চিনি বেশি দিয়েই নিয়ে গেলাম।
আমরা রাতে চা খেলে বেলকোনিতে বসেই খাই।আমি সব কিছু ওখানে নিয়ে জোরে চিৎকার করে ডাক দিলাম,
-মিলি,,
.
মিলি প্রায় ছূঁটে এলো। আমার হাত দুটো ধরে বলল,
-কি হইছে হাত পুরে ফেলছো,এজন্যই বলছিলাম বানাইওনা।এখন কি হবে? কই পুড়ছে দেখি,,
.
আমি ওর হাত থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,
-হাত পোড়েনি,চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে,
-এজন্য এত জোড়ে চিৎকার করলা?
.
আমি ওর হাতে এক টা চায়ের কাপ তুলে দিতে দিতে বললাম,
-খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে?
-তুমিও পারো,,
.
গোলাপ গাছের টব থেকে একটা গোলাপ ছিড়ে ওর হাতে দিয়ে বললাম,
-আমি শুধু তোমাকে ভালবাসতেই পারি,,
-আর?
-আর আমি রোমান্টিক ও,,
-প্রুভ ইট,,
-করবো একটু পরেই,, চা শেষ করো।
.
চা খেতে খেতে মিলি বলল,
-খুব ঠান্ডা লাগছে,
-রুমে যাবে?
-না,,এখানে ভাল লাগছে।পরিবেশ টা ভাল সাথে চাঁদ টাকেও ভাল লাগছে।
-আচ্ছা, চাঁদর নিয়ে আসছি।
-না থাকো আমি যাই,
.
আমিও এটাই চাইছিলাম।মিলি ঘরে গিয়ে চাদর খুঁজে পাবে একটা।আমরা দুজন একটা চাদর এর নিচেই বসবো।যদিও আমাদের বাসায় চাদর আছে দুটা।অন্যটা লুকাই রাখছি।
.
কিছুক্ষন পর মিলি একটা চাদর নিয়ে ফিরলো।আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-একটা কেন?
-আরেক টা খুঁজে পাচ্ছিনা,
-ও সমস্যা নাই, একটাতেই দুজন এর হবে।
-আমি কই বসবো?
-কোলে বসবা?
-মজা করিও না,,
-আরে চেয়ারে অনেক জায়গা আছে, আসো।
.
মিলি এসে আমার পাশে বসল।আমরা একটা চাদর ভাগাভগি করে নিলাম।
-মিলি?
-হুম,
-দেখি হাত টা?
.
মিলির হাত টা ধরে বললাম,
-চাঁদ টার দিকে তাকাও, এখন সুন্দর না রোমান্টিক লাগবে,
-হুম,
.
আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
-এবার তো বিশ্বাস হলো আমি রোমান্টিক,
-হুম,চুরি করে,
-মানে?
-চাদর বালিশের নিচে লুকাই রাখছো,
-অহ জেনে গেছো,, তার মানে তুমি ও
.
মিলি হাসতে হাসতে বলল,
-যাই হোক,, চুরি করে হলেও তুমি রোমান্টিক।
.
আমি মিলির চুলে একটা চুমু দিয়ে বললাম,
-তুমিও
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন