“মিতি স্পেশাল চা হাউজ”
.
.
-আরেক কাপ চা পাওয়া যাবে?
.
মিতি কি যেন বলতে গিয়ে বলল না।তারপর রান্না ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল,
-বসুন,,
.
বোঝা গেল রেগে গেছে।অবশ্য রেগে যাওয়ারই কথা। এটা নিয়ে তিন কাপ চা চেয়েছি ওর কাছে।এতে আমারো কোন দোষ নেই!
মেয়েটা এত সুন্দর চা বানায় যে শুধু খেতেই ইচ্ছে করবে। ঈশ কোন ভাবে যদি ঘুম থেকে উঠে সকালের চা টা এই মেয়েটার হাতে খাওয়া যেত তবে অন্যরকমই হত।
কিন্তু তা সম্ভব নয়,,কারণ মিতি আমার বিয়ে করা বউ নয় আর হবার সম্ভাবনাও নেই।আমি মিতির ছোট ভাইকে পড়াই,সেই সুবাদে এই বাসায় যাওয়া আসা।
আর মিতির সাথেও সেই সূত্রে পরিচয়। আজ পড়াতে এসে দেখি মিতিকে ছেলে দেখতে এসেছে।
ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ভাল ছেলে,,আমার পছন্দ হয়েছে ছেলেটাকে।ছেলেটার ফ্যামিলিও ভাল। ছেলে পক্ষ কিছুক্ষন আগে চলে গেছে। মনে হয় মিতিকে পছন্দও করে গেছে,,না করার কিছু দেখিনা।
.
দুবছর আগে প্রথম যখন আমি মিতিকে দেখেছিলাম তখন আমারো ভাল লেগেছিল। মায়াবী চেহারার মেয়ে, ভাল লাগতেই হবে।
.
-নিন,,
.
আমি চা হাতে নিয়ে বললাম.,
-মিতি তুমি খুব সুন্দর চা বানাও জানো?
-হ্যাঁ,,
-তোমার বিয়ে হয়ে গেলে তোমার হাতের চা টুকু খুব মিস করব,
-আপনিও কাওকে বিয়ে করে নেন তাহলেই হচ্ছে,,
-তবে আমার কাছে এর চেয়ে ভাল একটা সলুশন আছে!
.
মিতি একটু আগ্রহ নিয়ে বলল,
-কি?
-তুমি একটা চায়ের দোকান দাও,, নাম হবে “”মিতি স্পেশাল চা হাউজ””
-কিহ?
-হ্যাঁ, এক কাপ চা দশ টাকা,, আমি টিপ্স হিসেবে আরো পাঁচ টাকা বাড়িয়ে পনের দিব।সকালে তোমার হাতের চা খেলে দিনটাই ভাল যাবে,,
-আপনি জানেন যার সাথে আমার বিয়ে হবে সে কি করে? একটু রেগেই বলল কথাটা।
-হ্যাঁ,ইঞ্জিনিয়ার। তো? কোন কাজকেই ছোট করে দেখতে নেই মিতি? এই চায়ের দোকান দিয়েই হয়ত তুমি প্রপুলার হয়ে যাবা,,
-লাগবেনা আমার প্রপুলার হওয়া,
-ভেবে দেখিও,,
-লাগবেনা,,
-আমার জন্য?
-নাহ,,কারো জন্যই না,,
-আচ্ছা,,তাহলে আর কি করার।আজ উঠি তবে,,,
-হুম,যান।।একটা কথা জানেন?
-কি?
-আপনি একটা বেকার লোক,,
-হুম,,
.
মিতিদের বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে চিন্তা করতে লাগলাম, মিতি মেয়েটাকে আমি কতটা পছন্দ করি? অনেকটাই হয়ত। যদিও কখনো বলিনি। মিতি অবশ্য বুঝতে পেরেছে।তাই আগের মত এত কাছা কাছি থাকেনা।
মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ভাবতেই পারছিনা।ভাবতেই ভয় লাগছে যে প্রতিদিন মিতিকে আর দেখা হবেনা, প্রতিদিন ওর হাতে চা খাওয়া হবেনা। এসব ভাবতেই অন্য রকম শূণ্যতা বিরাজ করছে আমার চারপাশে। যাই হোক যা হবার তাই তো হবে,,যে ভাগ্য নেই,তাকে ভেবে কি লাভ।তবে মিতিকে চা দোকান দেওয়ার বুদ্ধিটা ভালই দিয়েছিলাম।
.
পরের দিন মিতিদের বাসায় গিয়ে শুনলাম ওর বিয়ে ঠিক, নেক্সট শুক্রবার। বিয়ের দাওয়াত পেলাম।
সাথে ওর ছোট ভাইকেও ছুটি দিলাম দু সপ্তাহের,, বোনের বিয়ে বলে কথা।এতে সমস্যা আমারই হল আর ওদের বাসায় আসা হবেনা, মিতিকে দেখাও হবেনা।
যাই হোক যখন ওদের বাসা থেকে বের হব তখন মিতি পিছন থেকে ডাক দিল,
-শুনেন,,
.
আমি পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখি মিতি চা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।ওকে দেখে আমার কি যে ভাল লাগল।
মিতি আবার বলল,
-চা না খেয়েই যাচ্ছেন?
-না যাচ্ছিনা,, আমি মিতির হাত থেকে চা নিয়ে বসে পরলাম,,
.
মিতিও অন্য একটা চেয়ারে বসল।আমি আবার বললাম,
-তোমাকে আজ সুন্দর লাগছে জানো?
-তাই নাকি?
-হ্যাঁ,বিয়ের সময় মেয়েরা সুন্দর হয়,
-ছেলেরা কি হয়,,
-ছেলেরা হয় বান্দর,
-হিহিহিহি,, সত্যি?
-হ্যাঁ,,
-কে বলছে?
-আমি?
-আপনি কি বিয়ে করছেন যে জানেন?
-না,, বাট শুনেছি,,
.
মিতি আমার কথা শুনে হাসল।
-হাসছ কেন?
.-আপনার বিয়ের সময় তাহলে আপনিও বান্দর হবেন,
-না, বিয়ে করব না,
-কেন? বান্দর হওয়ার ভয়ে?
-আরেহ নাহ,,
.
মিতি আবার হাসলো।এই মেয়ে এত হাসে কিভাবে।
এই মেয়েকি জানে এই মেয়ের হাসিতে কত ভাল লাগা লুকিয়ে থাকে,,
আরো অনেকক্ষন কথা হলো মিতির সাথে।
হয়ত শেষ বারের জন্য।আর এ বাড়িরে আসা হবেনা।
-আচ্ছা,,আজ উঠি মিতি,,
-এক কাপেই শেষ,,
-এখন থেকে তোমার হাতের চা খাওয়া কমিয়ে দিচ্ছি,,
মিতি আমার কথা শুনে আর কিছু বলল না।আমি ওদের বাসা থেকে বের হয়ে এলাম।চিন্তা ভাবনা করলাম কয়েকদিন আর মিতির বাসায় যাবনা।
.
সেই অনুযায়ী গত তিন দিন আমি মিতিদের বাসায় যাইনি,,
সামনের চার দিন ও যাবনা।যাবো একেবারে মিতির বিয়ে শেষ হলে,, ভালবাসার মানুষের বিয়ে দেখার কোন ইচ্ছাই আমার নেই।
তবে রাত্রে ফোন এল। মিতির নাম্বার থেকে। মিতির নাম্বার সেভ করাই ছিল মোবাইলে।
-হ্যালো মিতি?
-হুম,
-কেমন আছ?
-বেশী ভাল না,,
-বিয়ের আগে এমন হয়।বিয়ের পর এমনি তে ভাল লাগবে,,
-দূর বিয়ে রাখেন তো,, আপনি আসেন না কেন?
-এমনিতেই ব্যাস্ত,,
-চা বানিয়ে দেয়ার জন্য অন্য একজন পেয়ে গেছেন তাইনা?
-আরেহ নাহ,,
–কাল একবার আসবেন?
-গ্রামের বাসায় যাব,,মা অসুস্থ,, (যদিও মিথ্যা কথা)
-ও আচ্ছা,,
-মিতি একটা কথা বলব?
-হ্যাঁ,,
-আমার ইচ্ছা ছিল,,একদিন সকালের চা টা তোমার হাতে খাওয়া,,
তখনি ফোন কেঁটে দিল মিতি। আমিও ফোন রেখে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে লাগলাম। কথাটা বলে কি ভুল কিছু করে ফেললাম।কি জানি?
.
রাতে দেরী করে ঘুমিয়েছিলাম তাই কলিংবেল কয়েকবার বাজার পরেও উঠতে ইচ্ছা হচ্ছিল না।
কিছুক্ষন টানা বাজার পর ইচ্ছার বিরুদ্ধে উঠে গিয়ে চোখ ডলতে ডলতে গেট খুললাম। দেখি মিতি দাঁড়িয়ে আছে।একটা হলুদ শাড়ি পড়ে। চোখ ডলতে ডলতে জিজ্ঞেস করলাম,,
-এখানে?
-হুম,তোমাকে চা খাওয়াতে আসছি,,
-তাই? কিন্তু বাসায় তো চিনি চা পাতি কিচ্ছু নাই,,
-নিয়ে আসো,,
-আচ্ছা,,
.
আমি ওই অবস্থা বাসার বাহিরে যাচ্ছিলাম,,তখনি মিতি বলল,
-একটু ভদ্র ভাবে যাও,, আমি পালিয়ে যাচ্ছিনা,,
-মানে?
-হ্যাঁ,, একসাথে থেকে একটা চায়ের দোকান দেব।
.
আমি জবাবে বললাম,
-ঠিকাছ তুমি?
-কি যেন নাম চায়ের দোকান টার?
-মিতি স্পেশাল চা হাউজ ,,
-গুড,,সুন্দর নাম।
-হ্যা,সুন্দরই,,
-হিহিহিহি,,
.
আমি এখনো বুঝলাম না মিতি কি চাইছে।
আমি আবার বললাম,
-পালিয়ে আসছ?
-না,, বাসায় বলে আসছি,
-কি বলছ?
-চায়ের দোকান দিতে যাচ্ছি.
-কিহ?
.
মিতি একটু রাগ হয়ে বলল,
–এতে বোকা কেন তুমি? বিয়ে কালকে।একদিন আগে কনে পালিয়েই তো আসবে,,
-হুম,,তো এখন,,
-চা বানাব,,
-সিরিয়াস হও,
-তোমার কাছে আসছি,,তুমি জানো,,
-চলো গ্রামে যাই,,
-যেখানে নিয়ে যাবা সেখানেই যাব।
-গুড,, ইম্প্রেস হইছি।
-দেরী করতেছ কেন? চলো
-দাঁড়াও চিনি চা পাতি কিনে আনি।এক কাপ চা খেয়েই বের হই। দোকানের শুভ উদ্ভোধন হোক।
.
মিতি আমার কথাটা শুনে হেসে ফেলল।সাথে আমিও।
জানিনা কি হচ্ছে আমার সাথে,,তবে ভালই হচ্ছে। মেয়েটার আজ গায়ে হলুদ সেটা কি ওর মনে আছে?
না থাকাই ভাল।সবচেয়ে ভাল ব্যাপার স্পেশাল চা হাউজ টা আমার বাসাতেই।
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন